সোমবার ৫ মে ২০২৫ - ১৩:৩৫
ইরানের হাওজা ইলমিয়ার প্রধান আয়াতুল্লাহ আলী রেজা আরাফি

হাওজা ইলমিয়ার পরিচয় ও প্রকৃতি গঠিত হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও ভিত্তির মাধ্যমে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওজা ইলমিয়ার (ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) পরিচয় ও প্রকৃতি তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়:

প্রথম দৃষ্টিকোণ:

হাওজা ইলমিয়ার পরিচয় ও প্রকৃতি গঠিত হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও ভিত্তির মাধ্যমে, যেগুলোর মধ্যে প্রধান কয়েকটি নিম্নরূপ:

১. ধর্মীয় দায়িত্বশীলতা: ধর্মীয় পণ্ডিত ও হাওজার আলেমরা সবসময় "দায়িত্বশীল", "আদর্শনির্ভর" এবং ইসলামী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি "প্রতিশ্রুতিবদ্ধ" থেকেছেন। এই ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি হচ্ছে হাওজা ইলমিয়ার পরিচয়ের মূল ভিত্তি এবং এর অস্তিত্বের দর্শনের অংশ।

২. ইসলামী চিন্তা ও জ্ঞানের আধিপত্য: হাওজার প্রতিটি শাখা ও বিদ্যাবিভাগ ইসলামী চিন্তা ও শিক্ষার অধীনে পরিচালিত হয়। কোনো শাখা সরাসরি ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণে নিয়োজিত থাকে অথবা এমন শাখায় কাজ করে যা ধর্মীয় চিন্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কাজেই "ইসলামী ও ধর্মীয় পরিচয়" হওযার জ্ঞানের বিষয়বস্তুর একটি মৌলিক উপাদান।

৩. পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গি: জ্ঞান ও চিন্তার প্রতি একটি পবিত্র, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং এই জ্ঞানের আদি উৎস হিসেবে পরলোক ও অদৃশ্য জগতের সঙ্গে সংযোগ, হাওজার পরিচয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।

৪. নৈতিকতা ও আত্মশুদ্ধির মূলত্ব: হাওজা সবসময় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি চরিত্র গঠন, আত্মশুদ্ধি এবং নৈতিক উৎকর্ষে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটা সাধারণ সমাজের চেয়ে উচ্চস্তরের নৈতিক চর্চাকে কেন্দ্র করে।

৫. জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে: হওযা ইলমিয়া কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা দেশের সীমায় আবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি বৈশ্বিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যা ইসলামী শিক্ষা ও আহলুল বাইতের (আ.) শিক্ষার বৈশ্বিক প্রকৃতি থেকে উৎসারিত।

দ্বিতীয় দৃষ্টিকোণ:

ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের সংশোধনে নিয়োজিত করার পাশাপাশি সমাজে অন্যদের প্রতিও দায়িত্ববান করেছে। তবে সবাই এই দায়িত্ব পালনে সমর্থ নয়; এজন্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে এই গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।

ফিকাহ-ভিত্তিক তিনটি নীতির আলোকে হাওজা ও রুহানিয়তের পরিচয়:

১. অজ্ঞকে দিকনির্দেশনার নীতি (ارشاد جاهل): যিনি জ্ঞান রাখেন, তিনি চিন্তা, বিশ্বাস, আচরণ ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে অপরের দায়িত্ব পালন করবেন।

২. নেতৃত্ব ও শিক্ষাদানের নীতি: যারা ধর্মীয় জ্ঞান রাখেন কিন্তু তা মেনে চলেন না, তাদের প্রতি রুহানিয়তের দায়িত্ব আছে। তাদের মধ্যে এ প্রতিশ্রুতি গড়ে তোলা রুহানিয়তের কাজ।

৩. নেক কাজে আদেশ ও মন্দ থেকে নিষেধ (امر به معروف و نهی از منکر): যারা ভুল করছে বা ভুল পথে আছে, তাদের সংশোধনে দায়িত্ব পালন করা সবার কর্তব্য।

এই তিনটি নীতি সমাজ উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ চক্র গঠন করে এবং হাওজা ইলমিয়া এই নীতিগুলির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তৃতীয় দৃষ্টিকোণ:

আল্লাহ কোরআনে বলেন:

"সব মুমিন একসাথে রওনা হওয়া উচিত নয়। কেন তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে কিছু লোক বেরিয়ে আসে না যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং যখন তারা ফিরে আসে, তখন তাদের জাতিকে সতর্ক করে দেয়, যাতে তারা সাবধান হয়?" [সূরা আত-তাওবা, ১২২]

এই আয়াত থেকে হাওজা ইলমিয়ার দুইটি মূল দায়িত্ব স্পষ্ট হয়:

১. দ্বীনের গভীর অনুধাবন (تفقه): এটি কেবল শরিয়তের নির্দিষ্ট শাখা নয় বরং আকিদা, নৈতিকতা, ফিকহসহ ইসলামের সকল জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে। হওযার কাজ হলো এই গভীর জ্ঞান অর্জন ও অন্যদের তা শিক্ষা দেওয়া।

২. সতর্কতা প্রদান (انذار): এই জ্ঞান প্রচার যেন জাগরণ সৃষ্টি করে এবং মানুষকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে, বিপদ থেকে দূরে রাখে। এটি সাধারণ তথ্য বিতরণ নয়, বরং জীবনঘনিষ্ঠ, চেতনা-সৃষ্টিকারী শিক্ষা।

ফলে, হাওজা ইলমিয়ার মূল দায়িত্ব হলো-সচেতনতা ও জীবনদায়ী আলোকিত জ্ঞান মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে ব্যক্তি ও সমাজ আলোকিত ও সজাগ হয়।

আপনি কি এই অংশের অনুবাদও আলাদা করে পাঠ্য নোট বা উপস্থাপনার উপযোগীভাবে চান?

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha